সম্পাদক: মো: রাসেল
সিলেটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নতুন উদ্যোগ
সর্বশেষ

সিলেটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নতুন উদ্যোগ

সম্পাদক
২ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:০৭ PM
৫ বার পঠিত

সংক্ষিপ্তসার

সরকার সিলেটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক অবকাঠামো প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে জাফলং, রাতারগুল, লালাখাল ইত্যাদি স্পটে রেস্ট হাউজ, হোটেল ও সড়ক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত। পরিকল্পনা দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং ১২০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এই উদ্যোগ স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। অবশেষে, সিলেটের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।

সিলেটের পর্যটন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি একটি ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হল জাফলং, রাতারগুল, লালাখাল এবং অন্যান্য প্রধান পর্যটন স্পটে অবকাঠামোকে আধুনিক ও টেকসই রূপে গড়ে তোলা। এ উদ্যোগের আওতায় রেস্ট হাউজ, হোটেল, তথ্যকেন্দ্র এবং পর্যটক সুবিধা নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ সংস্কার করা হবে। সরকার এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক বাজেট হিসেবে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি কাজ হল সড়ক সংস্কার, যা পর্যটকদের নিরাপদ ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। জাফলং ও লালাখালকে সংযুক্ত করা মূল সড়কটি এখনো পাকা না হওয়ায় গাড়ি চালানো কঠিন, তাই সরকার নতুন পাকা সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো সড়কের পৃষ্ঠতল মেরামত করবে। প্রকল্পের সম্পন্ন হওয়ার পর, সড়ক নেটওয়ার্কের গড় গতি ৪০ কিমি/ঘণ্টা থেকে ৬০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে, যা পর্যটকদের ভ্রমণ সময় কমিয়ে দেবে। রেস্ট হাউজ ও হোটেল নির্মাণে স্থানীয় নির্মাতা ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়াবে। এছাড়া, তথ্যকেন্দ্র ও সাইনেজ স্থাপন করে পর্যটকদের জন্য সহজে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে।

সিলেট ঐতিহাসিকভাবে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ পর্যটন গন্তব্য, যেখানে চা বাগান, হ্রদ, জলপ্রপাত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয় রয়েছে। তবে অতীতের অনিয়মিত বিনিয়োগ ও অপর্যাপ্ত সেবা মানের কারণে পর্যটক সংখ্যা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়নি। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার এই ঘাটতি দূর করে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈচিত্র্যময় আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে যদি সঠিকভাবে প্রচার ও সেবা প্রদান করা যায়, তবে দেশীয় ও বিদেশি পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এছাড়া, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও হস্তশিল্পের প্রচারও পরিকল্পনার অংশ, যাতে পর্যটকরা স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নিতে পারেন।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্পের প্রভাব বহুমুখী হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন সরাসরি নির্মাণ খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে, আর হোটেল ও রেস্ট হাউজের পরিচালনা দীর্ঘমেয়াদে হোস্টেল, রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় হস্তশিল্পের চাহিদা বাড়াবে। এছাড়া, পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে পরিবহন, গাইড, নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবার চাহিদা বাড়বে, যা স্থানীয় ব্যবসায়িক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করবে। অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, সিলেটের জিডিপি বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগের অবদান আগামী পাঁচ বছরে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

সরকারের এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন সিলেটকে দেশের প্রধান পর্যটন হাবের মধ্যে একটিতে রূপান্তরিত করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ সংরক্ষণ, স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হবে। শেষ পর্যন্ত, সিলেটের পর্যটন শিল্পের পুনর্জাগরণ শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

শেয়ার করুন:

মন্তব্য (0)

এই পোস্টে এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!