বগুড়া কোইপারায় এক নারী নিহত, পুলিশ তদন্তে গতি বাড়াল
সংক্ষিপ্তসার
বগুড়া কোইপারায় ৩২ বছর বয়সী রুবি আহমেদ গৃহহত্যার শিকার হন। গুলি শোনার পর মৃতদেহ পাওয়া যায়, সন্দেহভাজন এখনও ধরা পড়েনি। পুলিশ তদন্তে গতি বাড়িয়ে তথ্য সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে।
বগুড়া জেলার কোইপারা এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় এক নারীর গৃহহত্যা ঘটেছে, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে শক সৃষ্টি করেছে। ৩২ বছর বয়সী রুবি আহমেদ (বিবাহিত) তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ কোইপারা রোড‑৩১ নম্বর বাড়িতে বাস করতেন। সন্ধ্যা ৭টায় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তায় গুলি শোনার পর মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, গুলির ধ্বনি শোনার পরই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং মৃতদেহের সঙ্গে ৯.১ মিমি ক্যালিবারের গুলি চিহ্ন পাওয়া যায়। গুলির দিক নির্ণয়ের জন্য ফরেনসিক দলকে ডাকা হয় এবং গুলি চিহ্নের ভিত্তিতে সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইস্পি ডিপি রশিদুল ইসলাম, কোইপারা থানা প্রধান, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। গুলি চিহ্ন থেকে দেখা যায় গুলি দূর থেকে করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজন দ্রুতই পালিয়ে গিয়েছে। আমরা এখনো কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করতে পারিনি, তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহে গতি বাড়িয়েছি।" ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সাক্ষী, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন, "আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রুবি বোনের দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ গুলি শোনালাম। আমি তৎক্ষণাৎ দরজা বন্ধ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। গুলি শোনার পরই আমি জানালাম যে রুবি বোন গুলি পেয়েছেন।" রুবির স্বামী, মোহাম্মদ আলী, শোক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, "রুবি আমার জীবনের অর্ধেক। তার হঠাৎ মৃত্যু আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যেকোনো তথ্য শেয়ার করতে প্রস্তুত, যাতে দায়ী ব্যক্তি দ্রুত ধরা পড়ে।" স্থানীয় সমাজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কোইপারা এলাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে চুরি, গ্যাং সংঘর্ষ এবং এখন এই গৃহহত্যা অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় সিভিল সোসাইটি সংগঠন ‘বগুড়া সুরক্ষা সমিতি’ এর সভাপতি, শফিকুল ইসলাম, মন্তব্য করেন, "এমন হিংসা আমাদের সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। সরকার ও পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।" পুলিশ ইতিমধ্যে গৃহহত্যার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। রুবি আহমেদের স্বামী ও পরিবার জানিয়েছেন, রুবি কোনো শত্রু বা হুমকির মুখে ছিলেন না, তবে সম্প্রতি তিনি কিছু পারিবারিক সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অধিক তথ্যের জন্য পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হটলাইন ৯৯৯-৯৯৯-৯৯৯ নম্বরে কল করা যেতে পারে। রুবি আহমেদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের পক্ষ থেকে শোকের বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, "রুবি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তার স্মৃতি আমাদেরকে একত্রিত করবে এবং ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।" এই দুঃখজনক ঘটনার পর, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। কোইপারা থানা ইতিমধ্যে রাস্তায় পেট্রোল গাড়ি ও প্যাডলেট স্থাপন করেছে এবং রাতের সময় গাড়ি চলাচল সীমিত করা হবে। সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে, সন্দেহভাজনকে দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাবে। এই গৃহহত্যা বগুড়া জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন তুলেছে এবং স্থানীয় জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানাচ্ছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত রুবি আহমেদের পরিবার ও পুরো সমাজের শোকের সময় চলবে।