নওগাঁর আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড: ছয়টি দোকান পুড়ে গেল, কোনো প্রাণহানি নয়
সংক্ষিপ্তসার
নওগাঁর আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনে ১২ নভেম্বর অগ্নিকাণ্ডে ছয়টি দোকান পুড়ে যায়, কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও ক্ষতি বড়। সম্ভাব্য বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের সূত্রে তদন্ত চলছে, রেলওয়ে ও সরকার নিরাপত্তা সংস্কার ও ক্ষতিপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নভেম্বর ১২, ২০২৫ – নওগাঁ জেলার আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থিত কাশিবাড়ি বাজারে সন্ধ্যাবেলায় একটি বিশাল অগ্নিকাণ্ডে ছয়টি ছোট দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। ভাগ্যক্রমে, কোনো কর্মী, বিক্রেতা বা যাত্রী আহত হয়নি, তবে স্থানীয় ব্যবসায়িকদের জন্য ক্ষতি উল্লেখযোগ্য। অগ্নিকাণ্ডটি রাত ৭টায় শুরু হয় বলে জানা যায়। স্টেশন পার্শ্ববর্তী বিদ্যুৎ লাইন থেকে সম্ভাব্য শর্ট সার্কিটের সূত্রে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আত্রাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দ্রুত পদক্ষেপে আগুনটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে আগুনের তীব্রতা ও কাঠামোগত নকশার কারণে শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্টেশন ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মুখে প্রশ্নের মুখে, রেলওয়ে বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে পুরনো বৈদ্যুতিক তারের সংযোগে কোনো ত্রুটি ঘটেছে, যা সম্ভবত শর্ট সার্কিটের কারণ হয়েছে। আমরা তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করেছি এবং দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।" স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ চৌধুরী, যাঁর দোকানও পুড়েছে, বলেন, "আমাদের সব পণ্য ও সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে। যদিও কেউ আহত হয়নি, তবে আর্থিক ক্ষতি আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত সহায়তা চাই।" এই ঘটনার পর রেলওয়ে নিরাপত্তা বিষয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের মধ্যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র শ্রীমতি নূরজাহান বেগম উল্লেখ করেন, "গত কয়েক বছরে রেলওয়ে স্টেশন ও ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা এখনই একটি সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা চালু করছি, যার মধ্যে পুরনো বৈদ্যুতিক সিস্টেমের আধুনিকায়ন, অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জামের আপডেট এবং নিয়মিত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।" সরকারের দিক থেকে, পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জহিরুল ইসলাম জানান, "এই ধরনের ঘটনা আমাদের সতর্ক করে দেয় যে রেলওয়ে অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা তৎক্ষণাৎ স্টেশনগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা অডিট চালু করব এবং প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করব।" অগ্নিকাণ্ডের পর, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিওগুলো দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কাশিবাড়ি বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী শেল্টার ও মৌলিক সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এছাড়া, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে বৈদ্যুতিক সিস্টেমের পুরনো অবস্থা, অপর্যাপ্ত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণই প্রধান কারণ। তারা সুপারিশ করেন যে, রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে স্বয়ংক্রিয় অগ্নি সনাক্তকরণ ও দমনের ব্যবস্থা (অ্যাডভান্সড ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম) স্থাপন করা হোক এবং নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট করা হোক। এই ঘটনার পর, আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় মিডিয়া ও সামাজিক নেটওয়ার্কে তথ্য প্রচার শুরু হয়েছে। বাসিন্দা ও যাত্রীদেরকে অগ্নিকাণ্ডের সময় কীভাবে দ্রুত সাড়া দিতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ সেশনও আয়োজন করা হচ্ছে। সারসংক্ষেপে, আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে ছয়টি দোকান ধ্বংস হলেও কোনো প্রাণহানি না ঘটায়, তবে এটি রেলওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনই সমন্বিত নিরাপত্তা সংস্কার, তাত্ক্ষণিক তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন।