সম্পাদক: মো: রাসেল
সিলেটের পর্যটন রূপান্তর: টেকসই পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উত্থান
সর্বশেষ

সিলেটের পর্যটন রূপান্তর: টেকসই পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উত্থান

সম্পাদক
৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৫১ PM
৫ বার পঠিত

সংক্ষিপ্তসার

সিলেটের টেকসই পর্যটন রূপান্তর পরিকল্পনা, রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ সংরক্ষণে জোর দিয়ে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সিলেটের পর্যটন শিল্পে সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে উঠছে একটি ব্যাপক রূপান্তর পরিকল্পনা, যা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ঢাকা ট্রিবিউনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সাইদা রিজওয়ানা হাসান আজ (১৪ জুন, ২০২৫) জাফলং ও অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের জন্য একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান তৈরির ঘোষণা দেন। মাস্টার প্ল্যানের মূল লক্ষ্য হল টেকসই ইকো‑ট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবিকা উন্নত করা, বিশেষ করে পাথর উত্তোলন শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা। রিজওয়ানা হাসান বলেন, "সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে পর্যটনকে টেকসইভাবে বিকাশ করা আমাদের অগ্রাধিকার। এই পরিকল্পনা পরিবেশ রক্ষা, আধুনিক অবকাঠামো গঠন এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সমন্বয় ঘটাবে।" এই উদ্যোগে সিভিল এভিয়েশন ও ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একসাথে কাজ করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সিলেট বিভাগের কমিশনার খান মো. রেজাউল নাবি, জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদ, এবং বন অধিকারী মো. হুমায়ুন কবীরসহ বহু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন। সিলেটের পর্যটন শিল্প পূর্বে অবকাঠামোর ঘাটতি, দুর্বল ব্র্যান্ডিং এবং অপর্যাপ্ত বিপণন কৌশলের কারণে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাফলং, হিল ট্র্যাক, কুয়াশি, এবং লালাখালার মতো স্বাভাবিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন পরিকল্পনা এই ঘাটতিগুলো দূর করে রোড, সেতু, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মানোন্নয়ন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন প্যাকেজের মাধ্যমে সিলেটকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যে রূপান্তরিত করবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক রমেশ চৌধুরী উল্লেখ করেন, "সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়, তবে তা সরাসরি আঞ্চলিক জিডিপি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরণ এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রাখবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, পরবর্তী পাঁচ বছরে পর্যটন থেকে আয় বর্তমানের দ্বিগুণ হতে পারে।" স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গাইডদেরও এই পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। জাফলংয়ের গাইড রাকিবুল ইসলাম বলেন, "যদি সঠিক প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দেওয়া হয়, আমরা আরও বেশি বিদেশি পর্যটককে গাইড করতে পারব, যা আমাদের পরিবারে আয় বাড়াবে।" পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। জাফলংয়ের নদীর তীরের বায়ু ও পানির গুণমান উন্নত করতে বায়োফিল্টার ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, স্থানীয় কৃষক ও হস্তশিল্পীদের পণ্য বিক্রয়ের জন্য পর্যটন বাজার স্থাপন করা হবে, যা আঞ্চলিক অর্থনীতিকে বহুমুখী করবে। সিলেটের পর্যটন রূপান্তর পরিকল্পনা কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বরং টেকসই নীতি, স্থানীয় অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা যদি সফল হয়, তবে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

শেয়ার করুন:

মন্তব্য (0)

এই পোস্টে এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!